উচ্চ আদালতের নির্দেশনা- সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, গাড়ির নম্বর প্লেটে বাংলা ব্যবহার করতে হবে। সব দপ্তরের নামফলক এবং ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ইংরেজি বিজ্ঞাপন ও মিশ্র ভাষার ব্যবহার না করে বাংলা ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু এ নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। যথেচ্ছভাবে ইংরেজি ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছে। কোনো কোনো সাইনবোর্ডে অসম্মানজনকভাবে বাংলা ভাষা ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না।

২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে আদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডগুলো নির্দেশনা বাস্তবায়নের কাজ করবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।

সরেজমিন দেখা যায়, অভিজাত গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, ধানমন্ডি এলাকার বেশিরভাগ সাইনবোর্ডে ইংরেজি বড় করে লেখা। আর বাংলা লেখা ছোট করে। কোনো সাইনবোর্ডে বাংলাও নেই।

ধানমন্ডির বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, এই এলাকায় বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষ অভিজাত ও শিক্ষিত। এরপরও এখানকার যত অফিস আছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে- সেগুলোর নামফলক ও সাইনবোর্ডে ইংরেজির আধিক্য বেশি। যেসব সাইনবোর্ডে বাংলা লেখা আছে, সেগুলোও অসম্মানজনকভাবে। ইংরেজি বড় অক্ষরে আর বাংলা ছোট অক্ষরে লেখা। এমনভাবে বাংলা লেখা হয়েছে যে, তা চোখে পড়ে না।

গুলশানের বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য বটে! আমাদের দেশে শিক্ষিত ও সচেতন মানুষই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইন বেশি অমান্য করে। বাংলা ভাষার সঙ্গে আমাদের আবেগ ও ভালোবাসা জড়িত। মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য রক্ত ও জীবনদানের ঘটনা ঘটেছে। এ ত্যাগকে সম্মান জানিয়ে বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। অথচ আমরা এটাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। আর এটা বেশি করছে অভিজাত এলাকার মানুষ।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, নামফলক ও সাইনবোর্ডে বাংলা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বছরব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ তৎপরতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে এর সফলতা এসেছে। এরপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যত্যয় লক্ষ করা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সাইনবোর্ড ও নামফলকে বাংলা ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমরা অনেককে জরিমানা প্রদান করেছি। শাস্তি দিলেই সবাই এটা মানবে, বিষয়টি এমন নয়। এজন্য আমরা শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি সচেতনতা সৃষ্টিরও চেষ্টা করছি।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, সাইনবোর্ড ও নামফলকে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। দক্ষিণ সিটির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা রুটিন কাজের অংশ হিসেবে অভিযান পরিচালনা করছেন। প্রতি মাসের সমন্বয় সভায় এ বিষয়টির বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সাইনবোর্ড ও নামফলকে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। এছাড়া ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সময় সাইনবোর্ডের বিষয়টি চেক করা হচ্ছে। যাদের সাইনবোর্ডে বাংলা লেখা নেই, তাদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা হচ্ছে না। ভবিষ্যতে এ কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।

 

কলমকথা/ বিথী